নেপালের
স্মরণকালের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বিধবস্ত ভূমিকম্পে যেখানে ৯ হাজারের মতো
মানুষ নিহত হয়েছে সেই ভূমিকম্প নিয়ে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কানাডার
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক। তিনি তার এক গবেষ্ণায় জোর
দাবি দিয়ে বলেছেন, নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্প প্রাকৃতিক ছিল না, বরং বিশেষ
প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এই ভূমিকম্প ঘটিয়েছে। এই ভূমিকম্পের জন্য
যুক্তরাষ্ট্রের আবিষ্কৃত হার্প প্রযুক্তিকে দায়ী করছেন তিনি। সাম্প্রতিক
কালে নেপালে স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে পর্যটন সমৃদ্ধ দেশটির ব্যাপক ক্ষতি
হয়। এ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত নেপালসহ ভারত, চীন ও বাংলাদেশে সর্বমোট ৮৫০০
জনেরও অধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া নেপালের রাজধানী
কাঠমাণ্ডু শহরে অবস্থিত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্থানসমূহ ভূমিকম্পের ফলে
ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৩৪-এর নেপাল–বিহার ভূমিকম্পের পর এটি ছিল
নেপালে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। কানাডীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো বেঞ্জামিন ফালফোর্ড তাঁর নিজস্ব ব্লগে
জোরালোভাবে দাবি করেছেন, নেপালে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্প যুক্তরাষ্ট্রের
তৈরি। তিনি অভিযোগ করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনার মাধ্যমে ভারত এবং চীনকে
বার্তা প্রেরণ করেছে। চীনকে এবং ভারতকে বোঝাতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের
ক্ষমতা সম্পর্কে। চীনের হাত থেকে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই ভারতকে বাঁচাতে
পারে-এটা বোঝানোও অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। আর ঠিক এজন্যই এ ঘটনাটি ঘটানো
হয়েছে। আর তাদের এই ম্যাসেজ দেয়ার জন্য বলির পাঁঠা হতে হয়েছে নেপালের হাজার
হাজার সাধারণ মানুষকে।’ তিনি তার ব্লগে আরো বলেন, নেপালে সৃষ্ট ভূমিকম্প
মূলত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক তরঙ্গ (হার্প প্রযুক্তি)-এর মাধ্যমে
ঘটানো হয়েছে। হার্পের পুরো নাম হলো হাই ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাকটিভ অরোরাল
রিসার্চ প্রোগ্রাম। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর আর্থিক
সহায়তায় আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিরক্ষা উন্নয়ন গবেষণা কর্মসূচী
সংস্থা (ডিআরপিএ) হার্প গবেষণা চালাচ্ছে ১৯৯৩ সাল থেকে। এ কর্মসূচির প্রধান
উদ্দেশ্য হলো আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে
সৌরবিদ্যুতের ওপর প্রভাব তৈরি করা। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরাসরি
সমুদ্রের নিচে অথবা মাটির অভ্যন্তরে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সৃষ্টির
মাধ্যমে সুনামি অথবা ভূমিকম্প তৈরি করা যায়। গবেষকদের দাবি, এর আগে বিভিন্ন
সময়ে বিভিন্ন দেশে কৃত্রিমভাবে এই ভূমিকম্প সৃষ্টি করা হয়েছিল। যদিও এ
ধরনের অভিযোগের পক্ষে বিপক্ষে নানা মত রয়েছে। শুরুতে হার্প নিয়ে অভিযোগকে
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে দেখানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হার্প দিয়ে
মানববিধ্বংসী অস্ত্রের পরীক্ষার অভিযোগ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। জানা যায়,
এই প্রকল্প শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধের শুরু থেকে। রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র
আলাদাভাবে এ নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। হার্পের আওতায়
যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয়েই কৃত্রিমভাবে প্রাকৃতিক দুর্বিপাক সৃষ্টির
অস্ত্র তৈরি করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। হার্প নিয়ে রাশিয়ার চেয়ে
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই অভিযোগ বেশি আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। এর আগে
হাইতিতে ভূমিকম্পের পর পরই ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ অভিযোগ
করেন, আমেরিকার হাইতিতে টেকটোনিক ওয়েপন বা ভূ-কম্পন অস্ত্রের পরীক্ষা
চালিয়েছে। ওই পরীক্ষার ফলে হাইতির পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে
সৃষ্টি হয় রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প। তিনি আরো বলেন, এই অস্ত্র
দূরবর্তী কোনো স্থানের পরিবেশের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। পরিবেশকে ধ্বংস করে
দিতে পারে। শক্তিশালী বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ সৃষ্টির মাধ্যমে ভূমিকম্প
সৃষ্টি করতে পারে বা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটাতে পারে। শ্যাভেজ
আমেরিকাকে এই ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প অস্ত্র প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার আহ্বান
জানান। হাইতির ঘটনায় প্রায় এক লাখ ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে বলে
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে ৩০ লাখেরও বেশি লোক
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি সূত্র থেকে দাবি করা হয়, এ ধরনের
অপর এক অস্ত্র পরীক্ষায় চীনের সিচুয়ান প্রদেশে ২০০৮ সালের ১২ মে ৭ দশমিক ৮
মাত্রার ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এছাড়া রাশিয়া ২০০২ সালের মার্চে
আফগানিস্তানে অনুরূপ এক পরীক্ষা চালিয়ে ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প
সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে।
by ibrahim HD
0 comments:
Post a Comment