Friday, January 26, 2018

পদ্মাবতী মুভি রিভিউ।

মুভি:"পদ্মাবত" 
কাস্ট:দিপীকা পাডুকোন,শাহীদ কাপুর,রাণভীর সিং,রাজা মুরাদ,আদিতি রাও হায়দারী 
ডিরেক্টর:সাঞ্জায় লীলা বানসালি 
পার্সোনাল রেটিং:৯.৫/১০ 


ইতিহাসে "পদ্মাবতী" এই ক্যারেক্টার টাকে নিয়াই অনেক বিতর্ক আছে। কাহিনীটা মূলত ১৩০০-১৫০০ শতকের। অনেকের মতেই এইটা ১৫৪০ শতকে লকবি "মালিক মোহাম্মদ জায়সী" তার কবিতায় পদ্মাবতী নামের কাল্পনিক চরিত্রের অবতারণা করেন। আবার অনেকে বলে রাণী পদ্মাবতীর জন্ম ১৩-১৪ শতকের মাঝামাঝি কোনো একসময় শ্রীলংকাতে জন্ম হয়। আর যাদের নিয়া কাহিনী খিলজী,রানা রতন সিং তারা সবাই কবিতা লেখার ১৫০-২০০ বছর আগে মারা যায়। কিন্তু ভিন্নমতও নেহাত কম নয়। মজার একটা রিউমার প্রচলিত আছে রাণী "পদ্মাবতীর" ব্যাপারে সেইটা হলো রাণীর বাবা অনেক স্ট্রিক্ট ছিলো মেয়ের ব্যাপারে রাণীর একমাত্র সঙ্গী ছিলো তার কথাবলা তোতাপাখি "হিরামণ"। তো রাজা হঠাৎ লক্ষ্য করলো তার মেয়ে সারাদিন হিরামণের সাথে গল্প করে,হাসাহাসি করে। ব্যাপারটা রাজার ভালো লাগেনায় সে ৪ সেপাহীকে "হিরামনকে" হত্যার নির্দেশ দিলো। তো সিপাহীরে হত্যার জন্য হিরামনকে বনে নিয়া গেলো বাট সেখানে ঘটলো আরেক ঘটনা সিপাহীদের হাত ফস্কে "হিরামণ" সোজা চলে গেলো রাজা রতন সিং এর দরবারে এবং তার কাছে রাণীর অপরুপ রুপের বর্ণনা করলো এবং তা শুনে মুগ্ধ হয়ে রাজা বিবাহের প্রস্তাব পাঠায়। পরে "পদ্মাবতীর" বাবা রতন সিং বিবাহিত হওয়া সত্বেও তার ভয়ে বিবাহ দিতে বাধ্য হন। 

যাইহোক,মূল কাহিনী হইলো এক রাজ্যে রাণভীর সিং তার চাচা জালালউদ্দিন খিলজীর ( রাজা মুরাদ) মেয়েকে (আদিতী রাও) বিয়ে করে। এবং পরে চাচা কাম শশুরকে উপরে পাঠাইয়া নিজেই রাজা হয় রাণভীর। আরেক রাজ্যে শাহীদ কাপুর দিপীকাকে বিয়া কইরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে ছিলো। 

কিন্তু আলাউদ্দিন খিলজি ছিলো একটু উচ্চাভিলাসী ধরেন উনি ধানমন্ডি এলাকার নেতা কিন্তু তার খিলগাও,রামপুরা,গুলশান সব জায়গার রাজত্ত্ব লাগবে। সেই সুবাদেই পাক্নামি কইরা শাহীদ কাপুরকে আক্রমন করে। কোনো এক পর্যায়ে যুদ্ধ বাদ দিয়া শাহীদের রাজপ্রাসাদে দাওয়াত খাইতে যাইয়া লাস্টে আইসা তার বউকে দেখতে চায় শাহীদের ব্যাপারটা পছন্দ না হইলেও গ্যাঞ্জাম এড়ানোর জন্য অনেক সিস্টেম কইরা জাস্ট একঝলক দেখায় আর এতেই আগে থেইকাই বিবাহিত রাণভীর সিং এর আবার বিয়ার শখ জাগে। 

পরে নিজের রাজ্যে গিয়া সে শাহীদকে দাওয়াত দিয়া নিয়া ট্র‍্যাপে ফালাইয়া আটকাইয়া ফালায় মুক্তিপণ হিসেবে তার রাণী "পদ্মাভতীকে" লাগবে। পদ্মাভতীও তার স্বামীকে রক্ষার জন্য বিশাল দলবল নিয়া রাণভীরের কাছে যায়। এবং কোনো ঝামেলা ছাড়াই শাহীদকে ছাড়াইয়া নিয়া আসে। এই সিনটা মুভির সেকেন্ড বেস্ট সিন। এত জোছ ডায়লগ ছিলো এই সিনে বলার বাইরে। রাণভীর-দিপীকা সমান মার্ক পাবে এই সিনে। দিপীকা কত উচুমাপের এক্ট্রেস এই সিন দেখলেই বুঝবেন সবাই। যাইহোক,এইতো হইলো মোটামোটি থিম বাকিটা নিজেরা দেখলেই বেশী মজা পাবেন। 

মুভির বেস্ট পার্ট হইলো মুভির স্ক্রিনপ্লে,ডায়লগ,রাণভীরের এক্টিং। মুভির লক্ষ্য কিনতু একটাই খিলজীর সাথে কি "পদ্মাভতীর" লাস্টে মিল হবে কি হবেনা কিন্তু কাহিনীর বাকগুলা আর স্ক্রিনপ্লে এত সুন্দর কাহিনী বা ইতিহাস জানার পরেও আপনি একমিনিটের জন্য বোর হবেননা সিওর। 

রাণভীর সিং এত ভালো কাজ করছে যে ক্যারিয়ারে যদি "বেফিকরে" বা "কিল দিল" এর মত আরো ১০ টা বাজে ছবিও করে প্রব্লেম নাই "খিলজী" চরিত্রটা দিয়াই দর্শক তাকে মৃত্যুর পরেও মনে রাখনে এতোটা ইম্প্যাক্টফুল ছিলো ক্যারেক্টারটা। 

মুভির বেস্ট পার্ট হইছে লাস্ট সিনটা।দিপীকার এই এক্টিংটুকু অনেক শক্ত মনের মানুষের চোখেই পানি আনবে। স্পেশালি বাকি নারীদের নিয়া "জোহার করার" ১.৫-২ মিনিট। আগের যুগের নারীরা নিজের ইজ্জত আর মর্যাদা বাচানোর জন্য কি করতে পারতো তা অসাধারণভাবে দেখাইছে সাঞ্জায় লীলা ভানসালি। 

মুভির মিউজিক সাঞ্জায় লীলা ভানসালির নিজেরই। লোকটা আসলেই একটা জিনিস। 
এই রিমেক্স,রিক্রিয়েট,কপিপেস্ট এর যুগে অনেকদিন পর মন ঠান্ডা করা ভালো মিউজিক আছে এই মুভিতে। সব গান ভালো না লাগলেও ম্যাক্সিমাম মানুষেরই "নীতি মোহানের" "নেয়নো ওয়ালে নে" আর অরিজিৎ এর "বিন্তে দিল" গান দুইটা ভালো লাগতে বাধ্য। ভাই অরিজিৎ এরাবিক স্টাইলে গানটা এত সুন্দরভাবে গাইছে আপনি অরিজিৎ হেটার হইলেও বলবেন এই মুহূর্তে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে অরিজিৎ বেস্ট ♥♥♥ 

মুভি রাজস্থান,বিহার,উত্তর প্রদেশ,মধ্যপ্রদেশ,গুজরাট সহ অনেক স্টেটেই রিলিজ দিতে দেয়নায় আটকাইয়া দিছে। সব জায়গায় রিলিজ পাইলে ইজিলি ৫০০-৬০০ কোটি বিজনেস করতো বাট হোপফুলি ১৮০ কোটি বাজেটের মুভিটা ২৫০-৩০০ কোটি ক্লাবে যাইতে পারবে। প্রথম দিন বিজনেস করছে ২৫ কোটি প্লাস। মুভি নাইলে আটকাইয়া দিছে কিন্তু এওয়ার্ডের জোয়াড় কিভাবে আটকাবে "কার্ণী সেনা"?? এই রোলের জন্য রাণভীর "ফ্লিমফেয়ার" না পাইলে তার প্রতি অবিচার করা হবে। 

আপনি যেই টাইপেরই মুভিলাভার হন হলিউড,বলিউড,ঢালিউড,টালিউড সত্যিকারের একজন মুভিলাভার হইলে এইটা আপনার জন্য মাস্ট ওয়াচ একটা মুভি। নিঃসন্দেহে এইটা বলিউডে ইতিহাসের সেরা ৫ টা ছবির মধ্যে একটা। হাতে সময় থাকলে দেখে ফেলুন এই মাস্টারপিস মুভিটা ♥♥♥ 


0 comments:

Post a Comment