Tuesday, June 30, 2015

রমজান মাস ও মুসলিম খেলোয়াড়

চলছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মুসলমানগণ দীর্ঘ ১১ মাস প্রতীক্ষায় থাকেন মর্যাদাপূর্ণ এই মাসের জন্য। যখন এ মাস তাদের সামনে এসে যায়, তখন তারা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পূণ্যতা অর্জনে সচেষ্ট হন। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার এবং ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে নিজেদের বিরত রাখার মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেন।
তবে ধর্মীয় অনুভূতির এ বিষয়টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে ফুটবল বিশ্বের পেশাদার খেলোয়াড়দের জন্য। ধর্মের বন্ধনে আবদ্ধ এসব মুসলিম খেলোয়াড়দের ওপর রমজান মাস একটা বিশেষ প্রভাবই বিস্তার করে থাকে। মূলত সেটা ক্লাব বা দেশের প্রয়োজনের তাগিদেই। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কর্মের প্রভাব এবং বিভিন্ন ক্লাবের পারিশ্রমিকের অদৃশ্য দোহাইয়ের কারণে সিয়াম সাধনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন মুসলিম খেলোয়াড়রা।
কেবল কৌশলের খেলা তা নয়। মাঠ দাপিয়ে বেড়াতে শক্তি ও সামর্থ্যরে একটি বিষয়ও জড়িত। কেননা পেটে খাবার না থাকলে কিংবা তৃষ্ণার তাড়না মেটাতে না পারলে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন খেলোয়াড়রা। এমনকি ফিটনেস ধরে রাখাটাও কঠিন হয়ে পড়ে। রোজা রাখলেই এমন ঘটতে প্রায়ই দেখা যায়।
অথচ ক্লাবগুলো প্রতি বছর এক একজন খেলোয়াড়ের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে থাকে। তাই খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা আদায় করে নিতে ক্লাবগুলো চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখে না। রোজা রাখার কারণে ওই খেলোয়াড়ের কাছ থেকে অনেক সময়ই প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স কিংবা তার বেশি কিছু পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সেসব মুসলিম খেলোয়াড়ের মাঠে নামার সুযোগ হয় না। তাদের জায়গা হয় সাইড বেঞ্চে।
সবচেয়ে বেশি জমজমাট ইউরোপিয়ান ফুটবল সংস্কৃতি। বছরব্যাপি লিগগুলোকে ঘিরে ফুটবল বোদ্ধাদের আকর্ষণ ও রোমাঞ্চের কমতি থাকে না। এসব লিগ এবং এখানকার বিভিন্ন ক্লাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক মুসলিম তারকা ফুটবলার। অধীর আগ্রহ নিয়ে দীর্ঘ ১১ মাসের প্রতীক্ষার প্রহর গোনার পর আসে তাদের আকাঙ্ক্ষার মাস রমজান। তখন হয়তো রোজার সময় এসব মুসলিম খেলোয়াড়কে নিয়ে কিছুটা বেকায়দায় পড়ে যায় ক্লাবগুলো। ইউরোপের বিভিন্ন বড় বড় ক্লাবগুলোর ধারণা রোজা রাখা অবস্থায় কখনোই একজন ফুটবলার তার সেরাটা দিতে পারে না। সেটা অবশ্য অমূলক দাবি নয় তাদের।
তবে দাবির সঙ্গে মোটেই বিশ্বাসী নন টটেনহ্যাম ও সেভিয়ার প্রাক্তন তারকা ফ্রেদেরিক উমার কানাউতি। এ প্রসঙ্গে মালির এ ফুটবলার বলেন, ‘রোজা রাখা অবস্থায় আমার কাছে কোনো কিছুই ব্যতিক্রম মনে হয়নি। সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয়েছে। তবে রোজা রাখলে আমি আরো ভালো পারফরম্যান্স করতে পারতাম। এটা শুধু খাদ্যাভ্যাস থেকে বিরত কিংবা পানাহার থেকে দূরে রাখে না, বরং বিভিন্ন ধরণের নেতিবাচক কাজ থেকেও বিরত রাখে।’
তাল মিলিয়েছেন আর্সেনাল মিডফিল্ডার আবু দিয়াবি। তবে তিনি আর্সেনালের প্রতি সরাসরি অভিযোগের তীর ছুড়েছেন। রোজা রাখলে নাকি তার ওপর বিরূপ ধারণাই পোষণ করে উত্তর লন্ডনের ক্লাবটি। এমনটাই দাবি করেছেন তিনি, ‘আর্সেনাল চায় আমি যেন রোজা না রাখি। কিন্তু তারা জানে এটা আমার জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ মাস। অথচ তারা আমার কাছে সেরাটা প্রত্যাশা করে। তবে ধর্মকে অগ্রাহ্য করে আমার পক্ষে কী করে সেটা সম্ভব!’
দিয়াবির মতে আর্সেনাল মুসলিম খেলোয়াড়দের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখাচ্ছে ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ। বাভারিয়ান ক্লাবটি ইসলাম ধর্মের প্রতি দেখাচ্ছে ভদ্রতা ও ধর্মীয় অনুভূতির দারুণ নিদর্শন। বায়ার্নেও রয়েছে মুসলিম খেলোয়াড়। বিশেষ করে বিলাল ফ্রাঙ্ক রিবেরি। ফরাসি এই তারকা ক্লাবটির কাছে একটি মসজিদ নির্মাণের আবেদন জানিয়েছিলেন। তার আবেদনকে সমর্থন করেছিলেন বায়ার্নের মুসলিম সমর্থকরা। শেষ পর্যন্ত বিলাল ফ্রাঙ্ক রিবেইরি এবং মুসলিম সমর্থকদের কথা চিন্তুা করে এলিয়াঞ্জ এরেনায় বায়ার্ন মিউনিখ মসজিদ নির্মাণ করতে যাচ্ছে। মসজিদের পাশাপাশি একটি ইসলামের ধর্মীয় পাঠাগারও তৈরি করবে তারা। এই মসজিদ ও পাঠাগার নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এর মোট খরচের ৮৫ শতাংশ দেবে বায়ার্ন। বাকি ১৫ শতাংশ দেবে বায়ার্নের মুসলিম খেলোয়াড় ও সমর্থকগণ।
মিউনিখ কেন? ইংলিশ ক্লাব নিউক্যাসেল ইউনাইটেড মিলিয়ন ডলার খরচ করে ইতিমধ্যে খেলোয়াড়দের জন্য স্টেডিয়ামের পশ্চিম কোণে মসজিদ বানিয়েছে। যাতে করে খেলোয়াড় ও সমর্থকের নামাজ আদায় করতে সমস্যা না হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ক্লাব ও জাতীয় দলে মুসলিম খেলোয়াড়দের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বাড়ছে মুসলিম সমর্থকদের সংখ্যাও। তাই ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাব বিষয়টি মাথায় রেখে খেলোয়াড় ও সমর্থকদের জন্য নামাজের স্থান তৈরি করে দিচ্ছে। যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির দারুণ এক উদাহরণ।
by ibrahim HD

0 comments:

Post a Comment