Saturday, December 23, 2017

মুভি রিভিউ: হালদা


বাংলাদেশি মুভি দেখতে গেলেই অন্যধরনের আবেগ কাজ করে। মুভিতে কোন ত্রুটি থাকলেও চোখে পড়ে না কিংবা মনে হয় এতটুকু করেছে সেটাই বা কম কী? কিন্তু তৌকীর আহমেদের মুভিতে সেটার প্রয়োজন হয় না। কীভাবে এরকম দারুন মুভি বানায় সে? হালদা সেই মুভির তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন। বলতেই হবে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেছি মুভিটি দেখে।
 


কাহিনী চট্টগ্রামের হালদা নদীর পাড়ে বসবাসকারী এক জেলে পরিবারের মেয়ে হাসু (তিশা) কে নিয়ে। যে নদীতে বছরের পর বছর মাছ ডিম পেড়ে যাচ্ছে, পরিবেশ দূষণের কারনে সেখানে আজ মাছ পাওয়া দায়। তিশার বাবা (ফজলুর রহমান বাবু) হালদায় মাছ না পেয়ে ট্রলার নিয়ে পাড়ি দেয় সমুদ্রে। ধরা পড়ে জলদস্যুদের হাতে। কোনমতে জীবন বাঁচিয়ে বাসায় ফেরে। কিন্তু ভাড়া করা ট্রলারের ৮ লক্ষ টাকা কীভাবে শোধ দেবে? এক বড়লোক ব্যবসায়ী (জাহিদ হাসান) প্রস্তাব দেয় তিশাকে বিবাহের জন্য। কিন্তু তিশাকে বিক্রি করে দিলেই কী মিটে যাবে সব ঝামেলা? শুরু হয় সাধারণ এক গ্রামীণ মেয়ের জীবনে জটিল সব টানাপোড়েন।



আজকাল গ্রামীণ মানুষদের জীবন নিয়ে মুভি খুব বেশি একটা হয় না। এর কারণ সব মানুষই শহুরে চাকচিক্য দেখতে চায়। কিন্তু একটি চলচ্চিত্র চাকচিক্যের জোরে তৈরী হলে বুঝতে হবে কোনভাবেই সেটি ভালো কোন মুভি নয়। কিন্তু তৌকীর আহমেদ সেইসবের ধার ধারেন না। গ্রামীণ হোক কিংবা শহুরে, মুভির চরিত্রগুলির সাথে যোগাযোগ স্থাপন এবং কাহিনীর প্রতি আকর্ষণই যে একটি মুভির প্রধান শক্তি সেটা এই ‘হালদা’ মুভি দিয়েই ভালমতোই বুঝিয়ে দিয়েছেন। তৌকীর আহমেদ বর্তমানে অবশ্যই বাংলাদেশের সেরা পরিচালক। 



বাংলাদেশী মুভির অন্যতম সমস্যা হলো মুভি না হয়ে নাটক হয়ে যায়। কাহিনী থাকলেও চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়ণ বেশি থাকে না। কিন্তু চিত্রায়ণেও দারুন “হালদা”। অনেকদিন পর একটি মুভি দেখলাম যেটাতে গ্রাফিক্সএর কোন কাজ নেই। হালদা নদীর উপর বৃষ্টি, বিদ্যুৎ চমকানো আকাশের তলে খুবই ভাব-গম্ভীর দৃশ্য, এক পা কাদার মধ্যে মাছ শিকার – সবই আসল। যেকারণে মুভিটি দেখতে খুবই ভালো লেগেছে। 



আমি ব্যক্তিগতভাবে তিশার অভিনয় একেবারেই অপছন্দ করি। এর কারণ তার অভিনীত বেশিরভাগ চরিত্র হয়ে থাকে ভয়ংকর সুন্দরী এক মেয়ে যার জন্য সব ছেলে দিওয়ানা। এর কারণে চরিত্রের বাইরে তার অভিনয় চোখে পড়েনি। কিন্তু হালদা –য় তিশার অভিনয় দেখে পুরাই টাশকি! ওরে আল্লাহ! তিশা এত ভালো অভিনেত্রী! প্রত্যেকটি দৃশ্যে বলতে হবে আগুন লাগায় দিসে। মুভিটিতে তিশাকে নায়িকা না বলে “নায়ক” বলা উচিত। 



ফজলুর রহমান বাবু কেও দারুণ লেগেছে। জাহিদ হাসানও দারুন করেছে। এই মুভিতে আমাদের প্রিয় আজ রবিবারের আনিস ভাইকে দেখে সবারই ঘৃণা আসবে। কিন্তু সবচেয়ে অসাধারণ লেগেছে দিলারা জামান কে। তিশা এবং দিলারা জামানের প্রত্যেকটি দৃশ্য মন ছুঁয়ে যায়। “সুরত বানু ও হাসু” কথোপকথনের দৃশ্যটি কারও খারাপ লাগতেই পারে না। 



মোশাররফ করিমের অভিনয়ে একটু হতাশ হয়েছি। চরিত্রটিও বেশ বিরক্তিকর ধরণের ছিল তবুও বলবো চরিত্রটিতে তাকে মানায়নি। যদিও হতে পারে মুভিটিকে নারীপ্রধান রাখার জন্যই ইচ্ছা করেই এই ব্যাপারটি করা হয়েছে। তবুও মোশাররফ এবং তিশার দৃশ্যগুলি একটু বিরক্তিকর। 



মুভিটি চাঁটগাইয়া ভাষার হলেও যথেষ্ট সহজ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যাতে সবাই বুঝতে পারে। এমনকি চাঁটগাইয়া ভাষার কারণের সংলাপগুলি বেশি মিষ্টি শোনায়। চট্টগ্রামবাসীদের এই মুভি না দেখলে পাপ হবে। 



মুভির খারাপ দিক নেই। তবুও যদি বলতে হয় তাহলে বলবো সমাপ্তি বেশ অবাস্তব হয়েছে। যদিও সমাপ্তি দেখে সবারই ভালো লাগবে।



বাংলাদেশী মুভি এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করি এরকম মুভি সামনে আরও আসবে। 
এক কথায় দারুন।

#ইন্টারনেট_থেকে

0 comments:

Post a Comment